নৌকা প্রতীকে ‘জাল’ ভোটের হিড়িক, ফলাফল স্থগিত


সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে দুটি কেন্দ্রে জাল ভোটের অভিযোগ পাওয়া গেছে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ অভিযোগের পর একটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।  
আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার পৌরসভায় ১০ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ১৬ বছরের প্রশাসনিক জটিলতা কাটিয়ে পৌরসভাটিতে প্রথমবারের মতো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।

এদিকে, ভোটকেন্দ্রে এক সাংবাদিককে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।
জাল ভোটের অভিযোগ
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কাশেম পল্লব ও বিএনপির প্রার্থী আবু নাসের পিন্টু অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভার কসবা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কসবা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট দিয়েছেন আওয়ামী প্রার্থীর এজেন্ট ও সমর্থকরা।
আজ দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কসবা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলে নেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। তাঁরা ভোটারদের বের করে দিয়ে ভোটকেন্দ্রে ভাঙচুর চালান। এ সময় ব্যাপক জাল ভোট দেওয়া হয়। জাল ভোট দেওয়ার সময় পুলিশ সামনে থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ সময় কেন্দ্র থেকে ভোটারদের বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে বের করে দেওয়া হয়। সেখানে ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দিয়ে জাল ভোট দেওয়া শুরু করেন নৌকা প্রতীকের এজেন্টরা।
ওই দুই প্রার্থী আরো বলেন, নৌকা প্রতীকে জাল ভোট দেওয়ার বিষয়ে বারবার অভিযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেননি কসবা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাসুম মিয়া। ভোটকেন্দ্রে ছড়ানো ছিটানো ও ছেঁড়া অনেক ব্যালট পেপারও দেখা গেছে। ভোটারদের অনেকে নিজের ভোট দিতে না পেরে ফিরে যান।
গণমাধ্যমকর্মীকে মারধর
স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস শুকুর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে দুপুরে বের হয়ে আসছিলেন। এ সময় সেই চিত্র ধারণ করতে গিয়ে চ্যানেল ২৪-এর ক্যামেরাপারসন শফি আহমদ মারধরের শিকার হন। তাঁর মাথায় কিলঘুষি মারেন নৌকা প্রতীকের ওই কেন্দ্রের এজেন্ট হারুনুর রশিদ দিপু। পরে অবশ্য এর জন্য তিনি ওই সাংবাদিকের কাছে ক্ষমা চান।
শেষ ১৫ মিনিটে ভোটগ্রহণ
ভোটারদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার কারণে দুপুর ২টা ৪০ থেকে কসবা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ৩টা ৩০ মিনিটে ওই ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৩টা ৪৫ মিনিটে আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়। ভোটগ্রহণ শেষ হয় বিকেল ৪টায়। শেষের ১৫ মিনিটে ভোটকেন্দ্রে তেমন ভোটারদের দেখা যায়নি।    
অভিযোগ অস্বীকার
কসবা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মাসুম মিয়া দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘কেন্দ্রে ঝামেলাকারীদের আমরা প্রতিহত করার চেষ্টা করেছি। লোকবল কম থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে একটু সময় লেগেছে।’
মাসুম মিয়া বলেন, ‘বিশৃঙ্খলকারীরা কোন দলের তা আমরা জানতে পারিনি। যেসব ব্যালটে সিল ও পোলিং এজেন্টের স্বাক্ষর নেই সেগুলো বাতিল করা হবে।’ ভোটগ্রহণ প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকলেও শেষ ১৫ মিনিটে সংশোধন করে ভোট নেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
জাল ভোট দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুস শুকুর বলেন, জাল ভোটের সঙ্গে তাঁর এজেন্ট বা সমর্থকরা জড়িত নন। ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরাই কেন্দ্রে ঝামেলা সৃষ্টি করেন।
এক কেন্দ্রে ভোটের ফল স্থগিত
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনির হোসেন বলেন, কসবা আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলার কারণে কেন্দ্রটির ভোটের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রে পরে ভোট নেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিন কেন্দ্রে আবার ভোট গ্রহণের দাবি
বিয়ানীবাজার পৌরসভার ২, ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন করে ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি দলীয় মেয়র পদপ্রার্থী আবু নাসের পিন্টু। এই দাবিতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মনির হোসেনের কাছে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ওই তিন কেন্দ্রে ব্যাপক জাল ভোট ও অনিয়ম হয়েছে। তাই আবার সেখানে ভোট নিতে হবে। তবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি নির্বাচন কর্মকর্তা।  
কেন্দ্রে ভোটারদের ভিড়
প্রথমবারের মতো পৌর মেয়র নির্বাচনে সকাল ৮ থেকেই ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভিড় করতে থাকেন ভোটাররা। নারী ভোটারদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়। প্রায় সবকটি কেন্দ্রকেই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বৃষ্টির দিন হলেও সকাল থেকে পৌরসভার ১০টি কেন্দ্রেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়।

  • প্রবাসী অধ্যুষিত পৌরসভাটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজার ২৪ জন। নির্বাচনে মোট আটজন প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। দলীয় প্রতীকের এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপির প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন প্রার্থী। 

No comments

সরকার নির্লজ্জভাবে প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছে : ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার নির্লজ্জভাবে বিরোধীদলের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নির্যাতন করছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ ...

Powered by Blogger.